সর্বশেষ :
সিলেটে দলীয় সভায় নেতাদের বাকবিতন্ডা ও ‘কল-কাণ্ডে’র ঘটনায় বিএনপির দুই তদন্ত কমিটি নবীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করছে, কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত ভারত থেকে ‘পুশ ইন’ ঠেকানো সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শাকিবের নায়িকা হিসেবে সাবিলা নূরকে নিয়ে কে কী লিখছেন স্থায়ী কমিটির বৈঠক : ডিসেম্বরে নির্বাচন আদায়ে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি সরকারকে শেষ বার্তা দিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক প্রেমিকা নিয়ে পুত্রের বিলাসী ভ্রমণ, বিতর্কের জেরে মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ পাকিস্তানে গুলি করে কিশোরী টিকটক তারকাকে হত্যা জামালগঞ্জে কৃষকদের নিয়ে পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক কমিটি গঠন
সীমাহীন ভোগান্তিতে গ্রাহক : শাল্লায় অপরিকল্পিত প্রকল্পে চার বছর ধরে অন্ধকারে পাঁচ গ্রাম!

সীমাহীন ভোগান্তিতে গ্রাহক : শাল্লায় অপরিকল্পিত প্রকল্পে চার বছর ধরে অন্ধকারে পাঁচ গ্রাম!

পাবেল আহমেদ,শাল্লা
সুনামগঞ্জের শাল্লায় চার বছর ধরে পাঁচটি গ্রামের অন্তত সহস্রাধিক পরিবার বিদুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। বিদুৎ না থাকায় একেবারে অন্ধকারেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই গ্রামের মানুষগুলো। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সহ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটছে এলাকার মানুষদের।

জানা যায়,২০১১ সালে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০০ কি:মি দৈর্ঘ্যের দেশের সর্ববৃহৎ একটি সৌর সোলার প্রকল্প হাতে নেয় তৎকালীন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। জেলার শাল্লা উপজেলার ২নং হবিবপুর ইউনিয়নের শাসখাই বাজারের নিকটবর্তী স্থানে এই প্রকল্পটি স্থাপন করা হলেও এলাকাবাসীর কোন উপকারে আসেনি। অভিযোগ রয়েছে অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করায় বাইশের বন্যায় সরকারের ৩২ কোটি টাকা গচ্ছা গেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে এখানকার স্থানীয় কারো সাথে কোন পরামর্শ বা মতবিনিময় করেননি প্রকল্পটি সংশ্লিষ্টরা। হাওরাঞ্চলের বাস্তব পরিস্থিতির বাহিরে গিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় বন্যা ছাড়াও বর্ষার পানিতে তলিয়ে যায় প্রকল্পটি। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে সৌর সোলার প্রকল্পের ব্যাটারি ও অতি মূল্যের যন্ত্রাংশগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে।

সরকারের এই ৩২ কোটি টাকা এখন গচ্ছাই গিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ২০১১ সালে এই বিদুৎ প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার পরে,২০১৭ সালের ১০ ই ডিসেম্বর অনলাইনে উদ্বোধদন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু উদ্বোধন করা হলেও আশার আলো দেখতে পারেননি এই এলাকার পাঁচ শতাধিক পরিবারের সহস্রাধিকেরও অধিক গ্রাহক। স্থানীয়দের অভিযোগ এত টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিদুৎ পেয়েও সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে গ্রাহকদের। দিনেরাতে মিলে কোনরকমে ২-৩ ঘন্টা বিদুৎ পাওয়া যেতো। আবার ঠিকমতো বিল না নেওয়ায় গ্রাহকদের কাছে জমা হয়েছে মোটা অংকের বকেয়া। তবে এই এলাকার মানুষকে বিদুৎ পেয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী এড. মোহাম্মদ শিশির মনির। মোহাম্মদ শিশির মনিরের ব্যক্তিগত অর্থায়নে এলাকাবাসীর কাছে সৌর সোলার প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পাওনা প্রায় আট লক্ষ টাকা বকেয়া বিল পরিশোধ করে দেন তিনি।

তবে বকেয়া পরিশোধ করেও পল্লী বিদুতের নতুন সংযোগ পেতে কোন সুরাহা পাননি এলাকাবাসী। ২০২২ সালের বন্যার আগে ২-৩ ঘন্টা বিদুৎ পেলেও বন্যার পর থেকে একেবারেই বিদুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন এই এলাকার মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাসখাই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাইশের বন্যায় বিদুৎ সংযোগ,খুঁটি ও লাইন একেবারে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রকল্পটি অপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় বর্ষায় পানিতে সহজেই তলিয়ে যায়। পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে প্রকল্পের অধিকাংশ যন্ত্রাংশ আস্তে আস্তে নষ্ট হতে থাকে। ২০২২ সালের বন্যার আগে কোনরকমে ২-৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ পেলেও বন্যার কবলে পরে এই প্রকল্পটি এখন আর কোন কাজেই আসছে না এলাকাবাসীর। এতে শাসখাই,মৌরাপুর,আগুয়াই,দত্তপাড়া ও বিলপুর সহ এই পাঁচটি গ্রামের লোকজন এখন একেবারে অন্ধকারেই জীবনযাপন করছেন। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও বন মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে প্রকল্পের ভেতরে গরুছাগল বসবাস করছে,খুঁটির সংযোগগুলোও একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কোন জায়গায় খুঁটির লাইন পানির নিচে উপচে পড়ে রয়েছে। কোন কোন জায়গায় মানুষের মাথায় স্পর্শ করছে ওই বিদ্যুতের লাইন। শাসখাই বাজারের ব্যবসায়িরা জানান, বিদ্যুৎ পেয়ে ব্যবসায় প্রসার ঘটানোর লক্ষ্য থাকলেও এই এলাকাবাসীর কপালে ঘটেছে এর উল্টো। এদিকে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিও টাঙ্গানো রয়েছে এই পাঁচ গ্রামের এরিয়ায় কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের সংযোগও পাচ্ছেন না বিদুৎ বঞ্চিত গ্রাহকেরা।

এই এলাকার গ্রাহক শাসখাই বাজারের ব্যবসায়ি বাদল চন্দ্র দাস বলেন, ২০২২ সালের আগে কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ পেলেও,বাইশের বন্যার পর থেকে আর একেবারেই বিদুৎ পাচ্ছি না। তিনি বলেন আমাদের অতি সন্নিকটে পল্লী বিদুতের সংযোগ থাকার পরেও পল্লী বিদুৎ পাচ্ছি না।

এলাকার বাসিন্দা দুলদুল চৌধুরী বলেন, মূলত পল্লী বিদুৎ,পিডিবি ও রহিম আফরোজের ঠেলাঠেলির কারনে আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। তিনি বলেন আগে ২-৩ ঘন্টা সময় বিদুৎ পেলেও এখন একেবারেই বন্ধ। রহিম আফরোজের সোলার প্রকল্পটি বাদ দিয়ে পল্লী বিদুতের সংযোগ পাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানান তিনি।

ইউপি চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে কিন্তু ফলাফল আমাদের জিরো। জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে করতে এখন আমি নিঃস্ব। সব আশা ছেড়ে দিয়ে এখন দৌড়াদৌড়ি বাদ দিয়ে দিছি।

এবিষয়ে পল্লী বিদুৎ দিরাই সাব- স্টেশনের এজিএম মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ওই এলাকার লোকেরা আজকে একটি আবেদন নিয়ে আমার কাছে এসেছে। আবেদনটি আমি সুনামগঞ্জ অফিসে পাঠাবো। তাছাড়া আমি এখানে নতুন এসেছি,এরচেয়ে ডিটেইলস কিছুই জানি না।

বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ড দিরাইয়ের আবাসিক প্রকৌশলী পরশুরাম তালুকদার বলেন, এবিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি কমিটির লোকজন বলতে পারবে। প্রকল্পটি যেহেতু পিডিবির অধিনে রয়েছে সেক্ষেত্রে সার্বিক পরিস্থিতি আপনি তো জানার কথা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি ওই কমিটির সদস্য নয়। সেজন্য কমিটির লোকজন ব্যতিত কোনকিছু বলতে পারবো না।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাসেল আহমেদ বলেন, এবিষয়টি নিয়ে বোর্ডে আলোচনা করা হয়েছে। শাসখাই সৌর সোলার প্রকল্প এলাকায় যেখানে পল্লী বিদুতের খুঁটি টাঙ্গানো রয়েছে সেসব স্থানে পল্লী বিদুতের সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। ওই এলাকায় পল্লী বিদুতের সংযোগ দিতে আলাদা করে কোন বরাদ্দের প্রয়োজন নেই বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff